Wednesday, January 9, 2013

অনিয়ম ও অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন জলসুখা ইউপি চেয়ারম্যান --হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ

আজমিরীগঞ্জ:

আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা ইউপি চেয়ারম্যান ইছাক চৌধুরী দিলু মিয়া ও তার পরিষদের মেম্বার লিবাছ মিয়া, লুৎফুর রহমান, শাহজাহান মিয়া ও আব্দুল আহাদ বক্কা’র বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি, ভিজিডি, ভিজিএফসহ বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাত, মহিলা মেম্বারের শ্লীলতাহানি, জুয়া খেলা এবং মদ-গাঁজা বিক্রি থেকে মাসোহারা আদায় ও ভিজিএফ এর চাল দুঃস্থদের না দিয়ে মাছ ও হাঁসের খামারে দেয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন একই পরিষদের নির্বাচিত ৩ মহিলা মেম্বার। গতকাল বুধবার বিকেলে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন একই ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা মেম্বার লক্ষ্মীরানী দেবনাথ। বক্তব্য রাখেন সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য রাজিয়া সুলতানা ও মাসুক বিবি।লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, ইউপি নির্বাচনের পর থেকে অদ্যাবধি চেয়ারম্যান ইছাক চৌধুরী দিলু মিয়া মাসিক ও বিশেষ সভা আনুষ্ঠানিকভাবে না করে তার মনগড়ামতো করছেন। চেয়ারম্যান বিগত দেড় বছরে মাসিক সভার কথা বলে বিভিন্ন ছল-ছাতুরীর মাধ্যমে মহিলা সদস্যদের কাছ থেকে দস্তখত আদায় করেন। পরবর্তীতে চেয়ারম্যান অফিসে সভায় গেলে তিনি জানান, সভায় আর কোন মেম্বারতো এখনো আসেনি। আগামী মাসে সভা করা হবে। একইভাবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে প্রায় ১৬/১৭ মাস যাবত সংরক্ষিত নারী সদস্যদের কাছ থেকে প্রতারণা করে দস্তখত আদায় করে নানা অপকর্ম করছেন। পরিষদের ১২ সদস্যের কারো সাথে একত্রে কোন পরিচিতি সভা পর্যন্ত হয়নি। বিচার, স্থানীয় সরকার, অর্থ, উন্নয়নসহ পরিষদের ১৩টি স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠনের জন্য বরাদ্দকৃত ৩৬ হাজার ৪শ টাকা সভা না করেই আত্মসাত করেন চেয়ারম্যান দিলু। পরিষদের শুরু থেকে চেয়ারম্যান দিলু মিয়া ও তার মনোনীত কয়েকজন মেম্বার ৩০৩ জন কার্ডধারী দুঃস্থ মহিলা মা-শিশুর ভিজিডি চাল-গম ৩০ কেজির পরিবর্তে ১৫/২০ কেজি এবং বিভিন্ন সময়ে ভিজিএফ এর ১ হাজার দুঃস্থ নারী-পুরুষের মাঝে ১০ কেজির পরিবর্তে ৫/৬ কেজি করে বিতরণ করেছেন।
তারা জানান, ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার লিবাছ মিয়া ও ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার লুৎফুর এলাকায় মদ ও গাঁজা বিক্রি ও জুয়া খেলাসহ বিভিন্ন অপকর্মের গডফাদার হিসেবে পরিচিত। তারা মহিলা সদস্যা লক্ষ্মী রানীকে কু-প্রস্তাব দেয় এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়। এ নিয়ে চেয়ারম্যান দিলু মিয়ার কাছে বিচার প্রার্থী হলে তিনি মেম্বারদের কথামতো চলতে বলেন।বিগত ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা সহ কয়েকদফা ওয়ার্ডের চাল বিতরণকালে পরিষদের মেম্বার শাহজাহান, আব্দুল আহাদ বক্কা ও লুৎফুর মহিলা সদস্যা মাসুক বিবিকে চেয়ারম্যান অফিস থেকে ঘাড় ধরে বের করে দেন। এ বিষয়ে তারা আইনেরও আশ্রয় নিয়েছেন।রাজিয়া সুলতানা, লক্ষ্মীরানী দেবনাথ, মাসুক বিবি জানান, ১শ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচি দ্বারা রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার কাজে কোন রকমের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রেখেই সুমদয় টাকা আত্মসাত করেন। ভুয়া ওয়ারিশান সার্টিফিকেট দেয়া চেয়ারম্যানের একটি নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৩ নারী সদস্যা জানান, ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও ভাটি অঞ্চলের কুখ্যাত ত্রাস, মহিলা সদস্য মাসুক বিবির স্বামী ইদু মিয়াসহ ৭/৮টি খুনের আসামী শাহজাহান মিয়া ভিজিডি ও ভিজিএফ’র চাল দরিদ্রদের মাঝে বন্টন না করে তার পরিচালিত বিভিন্ন জলমহাল ও হাঁসের খামারের খাবার হিসেবে ব্যবহার করেন।  চেয়ারম্যান ও তার সিন্ডিকেটের মেম্বারগণ ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও ৩ নারী সদস্যকে বাদ দিয়েই ২০১৩ ও ২০১৪ সালের জন্য ভিজিডির ৩০৩ জন দুঃস্থ নারী-পুরুষের তালিকা তৈরী করছেন।  তারা জানান, চেয়ারম্যান ও তার সিন্ডিকেটের মেম্বারদের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে গত ১৮ ডিসেম্বর সংরক্ষিত আসনের ৩ মহিলা সদস্যা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। এদিকে অভিযোগ দাখিলের পর মহিলা মেম্বারদের খুন, শ্লীলতাহানী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের হয়রানী করবে বলে তারা হুমকি-ধামকি দেয়। অন্যদিকে তারা মান-সম্মান, ইজ্জত ও প্রাণের ভয়ে গত ২৫ ডিসেম্বর আজমিরিগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। মহিলা সদস্য রাজিয়া সুলতানা, লক্ষ্মীরানী দেবনাথ, মাসুক বিবি জানান জেলা প্রশাসকের কাছে চেয়ারম্যান ও তার পরিষদের কয়েকজন মেম্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ার পর স্বদেশ নামে একটি ভুয়া এনজিও সংস্থার কর্মীকে দিয়ে মহিলা সদস্যা রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করায়। কিন্তু স্বদেশ নামে ভুয়া সংস্থাটি ইতিমধ্যে জলসুখাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে সর্বশান্ত করে সাধারণ মানুষদের। যেখানে ভুয়া সংস্থার সদস্য হিসেবে বক্কা মেম্বারের মেয়ে ও পুত্রবধূ এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া উচিত সেখানে ভুয়া অভিযোগে মহিলা মেম্বারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। বিগত ইউপি নির্বাচনের পর চেয়ারম্যান ইছাক ও তার পরিষদের সদস্য লিবাস জলসুখা গ্রামে এ্যান্ডিং নামে ভারতের আসাম রাজ্যের একটি জুয়া খেলা শুরু করে। ১০ টাকা ধরলে ৭০০ টাকা পাওয়া যাবে-এ জুয়া খেলায় গ্রামের নারী-পুরুষ থেকে বিভিন্ন বয়সী লোককে প্রলুব্ধ করতে থাকে। এতে করে ২/৩ জন লাভবান হলেও হাজার হাজার মানুষ সর্বশান্ত হয়। এমনকি কিছুদিন আগে জুয়া খেলায় সর্বশান্ত হয়ে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল আজিজ এর পুত্র আকিক আত্মহত্যা করে। আর এ জুয়া খেলার প্রতিবাদ জানাতে গিয়েও ৩ মহিলা সদস্যকে গালাগাল খেতে হয়।মহিলা মেম্বারদেরকে ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন বরাদ্দের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি তিন ভাগের এক ভাগ সরকারি নীতিমালা থাকলেও অদ্যাবধি তাদেরকে এক টন গমের একটি করে টিআর প্রকল্প ছাড়া আর কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি সভাপতি করা হয় নাই। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ৩ নং ওয়ার্ডের লক্ষ্মীরানী দেবনাথ জানান, তার বাড়ির সামনে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে অন্য ওয়ার্ডের পুরুষ সদস্যরা। তারা জানান, এলাকার অবহেলিত নারী ও সাধারণ জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সার্বিক উন্নয়নসহ সকল পর্যায়ের সেবা থেকে ৩ মহিলা সদস্য বঞ্চিত। তারা স্থানীয় সরকারের নীতিমালা মেনে জনগণের সেবা করতে চায় বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। পাশাপাশি দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান ইছাক চৌধুরী দিলু ও তার পরিষদের মেম্বার লিবাছ মিয়া, লুৎফুর রহমান, শাহজাহান ও বক্কা’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাংবাদিকদের মাধ্যমে সরকারের কাছে তারা দাবি তুলে ধরেন।

No comments:

Post a Comment