আজ ৭ নভেম্বর। ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিপ্লবের দিন। সাঁইত্রিশ বছর আগের সেই অবিস্মরণীয় বিপ্লবের মহানায়ক ছিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সিপাহী-জনতার মিলিত বিপ্লবে নস্যাত্ হয়ে যায় প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী ষড়যন্ত্র। আধিপত্যবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসন থেকে রক্ষা পায় বাংলাদেশ। এদিন সিপাহী-জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঢাকা সেনানিবাসের বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে আনেন তত্কালীন সেনাপ্রধান ও স্বাধীনতার ঘোষক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে। জাতীয় ইতিহাসের এই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ৭ নভেম্বর সংঘটিত হওয়ার পর প্রতিটি সরকার দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করেছে। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের জরুরি সরকার এ দিনের সরকারি ছুটি বাতিল করে এবং দিবসটি পালন করা থেকে বিরত থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারও তা পালন করছে না। এর আগে ’৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারও দিবসটি পালন করা থেকে বিরত ছিল, বাতিল করেছিল সরকারি ছুটি।
এবার জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস এমন একসময় পালিত হচ্ছে, যখন দেশ নানামুখী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের জালে জড়িয়ে পড়েছে। আগ্রাসী শক্তি তাদের থাবা বিস্তারে অনেকটাই সফল হয়েছে। ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্টের নামে অবাধ করিডোর দিয়ে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাকে। টিপাইমুখে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকাকে মরুভূমিতে পরিণত করার অপচেষ্টা চলছে। সীমান্তে প্রতিনিয়ত গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে নিরীহ বাংলাদেশীদের।
দিনটি উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদসহ জাতীয় নেতারা বিবৃতি দিয়েছেন। ৭ নভেম্বরের গুরুত্ব এবং তাত্পর্য তুলে ধরে গণমাধ্যমে বিশেষ অনুষ্ঠান, ক্রোড়পত্র প্রচার ও প্রকাশ করা হয়েছে।
১৯৭৫ সালের ৩ থেকে ৬ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর অনিশ্চিত অবস্থা বিরাজ করছিল। হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছিল স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ৩ নভেম্বর সেনাবাহিনীর একটি উচ্চাভিলাষী দল সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে বন্দী করে এক সামরিক অভ্যুত্থান ঘটালে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনা সাধারণ জনগণ ও সিপাহীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে। জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর সর্বমহলে, বিশেষত সিপাহীদের কাছে ছিলেন খুবই জনপ্রিয়। ফলে তারা পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ ও জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ৬ নভেম্বর মধ্যরাতে ঘটে সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ এক বিপ্লব, যা ইতিহাসে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে স্থান লাভ করে। দেশবাসী সেদিন জিয়ার হাতেই তুলে দিয়েছিল রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব।
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও মহাসচিবের বাণী : দিবসটি উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এক বাণীতে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ৭ নভেম্বর জাতীয় জীবনের এক ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সৈনিক-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল জাতীয় স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয় বুকে নিয়ে। তাই ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক বিপ্লব অত্যন্ত তাত্পর্যমণ্ডিত। স্বাধীনতা-উত্তর রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, তত্কালীন ক্ষমতাসীন মহলের নিজেদের স্বার্থের অনুকূলে দেশের স্বাধীনতা বিকিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা এবং ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য মানুষের বাক-ব্যক্তি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে গলাটিপে হত্যা করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়। ফলে জনমনে চরম অশান্তি ও হতাশা নেমে আসে। বাকশালী সরকার চরম অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী পন্থায় মানুষের ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদ দমন করে। দেশমাতৃকার এই চরম সঙ্কটকালে ’৭৫-এর ৩ নভেম্বর আধিপত্যবাদের এদেশীয় এজেন্টদের কূটকৌশলে মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে সপরিবারে ক্যান্টনমেন্টে বন্দী করা হয়। এই অরাজক পরিস্থিতিতে স্বজাতির স্বাধীনতা রক্ষায় রাজপথে অকুতোভয় দেশপ্রেমিক সৈনিক এবং জনতার ঢলে এক অনন্য সংহতির স্ফুরণে ৭ নভেম্বর জিয়া মুক্ত হন। এই পটপরিবর্তনে জিয়ার নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত হয় ও গণতন্ত্র অগ্রগতির পথে এগিয়ে যায়, বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে আসে। আধিপত্যবাদী শক্তি ও তাদের এদেশীয় অনুচররা উদ্দেশ্য সাধনের পথে কাঁটা মনে করে ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াকে হত্যা করে। জিয়া শাহাদত বরণ করলেও তার আদর্শে বলীয়ান মানুষ দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় এখনও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
খালেদা জিয়া বাণীতে আরও বলেন, বর্তমানে আবারও আধিপত্যবাদী শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় শিখণ্ডী বসিয়ে একের পর এক গোপন চুক্তি সম্পাদন করে গোটা দেশকে গ্রাস করতে চাইছে। এভাবে তারা আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রভুত্ব কায়েম রাখতে চায়। তাই আমি মনে করি, ৭ নভেম্বরের চেতনায় সব জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং আধিপত্যবাদী আগ্রাসন প্রতিরোধ করে জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এ মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এক বাণীতে ৭ নভেম্বরে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি তাদের সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।
তিনি বলেন, ’৭৫-এর ৭ নভেম্বর সৈনিক-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবে সঠিক জাতিসত্তার সন্ধান মেলে। সুরক্ষা হয় স্বজাতির স্বাধীনতা এবং স্বেচ্ছাচারিতার অর্গলমুক্ত হয় গণতন্ত্র। ১৯৭৫ সালের এ দিনে আধিপত্যবাদী শক্তির নীলনকশা প্রতিহত করে এদেশের বীর সৈনিক ও জনতা। সম্মিলিত প্রয়াসে জনগণ নতুন প্রত্যয়ে জেগে ওঠে। ৭ নভেম্বর বিপ্লবের সফলতার সিঁড়ি বেয়েই আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক মুক্তির পথ পেয়েছি। ৭ নভেম্বর বিপ্লবের মহানায়ক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আমাদের সে পথ দেখিয়ে গেছেন। তার প্রদর্শিত পথ ধরেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন-অগ্রগতির মহাসড়কে উঠে এসেছে। আর সেজন্যই আমাদের জাতীয় জীবনে ৭ নভেম্বরের গুরুত্ব অপরিসীম।
আজকের এই মহান দিনে আমি দেশবাসী সবাইকে আহ্বান জানাই—যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৭৫ সালে আমরা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম, সেই একই চেতনা বুকে ধারণ করে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় আবার সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমিরের বাণী : যথাযোগ্য মর্যাদায় ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালনের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় জীবনে এ দিবসটির গুরুত্ব ও তাত্পর্য অপরিসীম। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশের সিপাহী-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হেফাজত করেছিল। সেদিন এদেশের সিপাহী-জনতা আধিপত্যবাদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল তা চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ৭ নভেম্বরের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশবাসী ভবিষ্যতেও এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে হেফাজত করবে ইনশাল্লাহ। ৭ নভেম্বর যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য দলের সব শাখার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
৭ নভেম্বর উপলক্ষে এছাড়া বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ ভাসানী), বাংলাদেশ ন্যাপ, জাসদ প্রভৃতি সংগঠন।
ন্যাপ মহাসচিবের বাণী : বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূইয়া বলেছেন, স্বাধীনতার ৪১ বছরেও আমরা জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারিনি। ’৭৫-এর ৭ নভেম্বর ছিল ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক সৈনিক আর জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ সংগ্রাম। সেদিনই ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তি পরাজিত হয়েছিল। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আর পতাকা-মানচিত্র রক্ষায় সেই ৭ নভেম্বরের চেতনায় ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
তিনি গতকাল সকালে দলীয় কার্যালয়ে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ন্যাপ ঢাকা মহানগর আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নগর সহ-সভাপতি মতিয়ারা চৌধুরী মিনুর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ন্যাপ যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ শাহজাহান সাজু, স্বপন কুমার সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কামাল ভূইয়া, বাংলাদেশ যুব ন্যাপ যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান, বাংলাদেশ জাতীয় ছাত্রদল যুগ্ম আহ্বায়ক সোলায়মান সোহেল, ন্যাপ নগর সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামান শামিম, সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন ভানু, সম্পাদক আমিনা খাতুন মনি, মো. কাউছার আলী, ফাতেমা আক্তার লাকি প্রমুখ।
এবার জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস এমন একসময় পালিত হচ্ছে, যখন দেশ নানামুখী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের জালে জড়িয়ে পড়েছে। আগ্রাসী শক্তি তাদের থাবা বিস্তারে অনেকটাই সফল হয়েছে। ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্টের নামে অবাধ করিডোর দিয়ে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাকে। টিপাইমুখে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকাকে মরুভূমিতে পরিণত করার অপচেষ্টা চলছে। সীমান্তে প্রতিনিয়ত গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে নিরীহ বাংলাদেশীদের।
দিনটি উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদসহ জাতীয় নেতারা বিবৃতি দিয়েছেন। ৭ নভেম্বরের গুরুত্ব এবং তাত্পর্য তুলে ধরে গণমাধ্যমে বিশেষ অনুষ্ঠান, ক্রোড়পত্র প্রচার ও প্রকাশ করা হয়েছে।
১৯৭৫ সালের ৩ থেকে ৬ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর অনিশ্চিত অবস্থা বিরাজ করছিল। হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছিল স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ৩ নভেম্বর সেনাবাহিনীর একটি উচ্চাভিলাষী দল সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে বন্দী করে এক সামরিক অভ্যুত্থান ঘটালে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনা সাধারণ জনগণ ও সিপাহীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে। জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর সর্বমহলে, বিশেষত সিপাহীদের কাছে ছিলেন খুবই জনপ্রিয়। ফলে তারা পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ ও জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ৬ নভেম্বর মধ্যরাতে ঘটে সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ এক বিপ্লব, যা ইতিহাসে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে স্থান লাভ করে। দেশবাসী সেদিন জিয়ার হাতেই তুলে দিয়েছিল রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব।
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও মহাসচিবের বাণী : দিবসটি উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এক বাণীতে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ৭ নভেম্বর জাতীয় জীবনের এক ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সৈনিক-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল জাতীয় স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয় বুকে নিয়ে। তাই ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক বিপ্লব অত্যন্ত তাত্পর্যমণ্ডিত। স্বাধীনতা-উত্তর রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, তত্কালীন ক্ষমতাসীন মহলের নিজেদের স্বার্থের অনুকূলে দেশের স্বাধীনতা বিকিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা এবং ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য মানুষের বাক-ব্যক্তি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে গলাটিপে হত্যা করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়। ফলে জনমনে চরম অশান্তি ও হতাশা নেমে আসে। বাকশালী সরকার চরম অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী পন্থায় মানুষের ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদ দমন করে। দেশমাতৃকার এই চরম সঙ্কটকালে ’৭৫-এর ৩ নভেম্বর আধিপত্যবাদের এদেশীয় এজেন্টদের কূটকৌশলে মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে সপরিবারে ক্যান্টনমেন্টে বন্দী করা হয়। এই অরাজক পরিস্থিতিতে স্বজাতির স্বাধীনতা রক্ষায় রাজপথে অকুতোভয় দেশপ্রেমিক সৈনিক এবং জনতার ঢলে এক অনন্য সংহতির স্ফুরণে ৭ নভেম্বর জিয়া মুক্ত হন। এই পটপরিবর্তনে জিয়ার নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত হয় ও গণতন্ত্র অগ্রগতির পথে এগিয়ে যায়, বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে আসে। আধিপত্যবাদী শক্তি ও তাদের এদেশীয় অনুচররা উদ্দেশ্য সাধনের পথে কাঁটা মনে করে ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াকে হত্যা করে। জিয়া শাহাদত বরণ করলেও তার আদর্শে বলীয়ান মানুষ দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় এখনও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
খালেদা জিয়া বাণীতে আরও বলেন, বর্তমানে আবারও আধিপত্যবাদী শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় শিখণ্ডী বসিয়ে একের পর এক গোপন চুক্তি সম্পাদন করে গোটা দেশকে গ্রাস করতে চাইছে। এভাবে তারা আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রভুত্ব কায়েম রাখতে চায়। তাই আমি মনে করি, ৭ নভেম্বরের চেতনায় সব জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং আধিপত্যবাদী আগ্রাসন প্রতিরোধ করে জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এ মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এক বাণীতে ৭ নভেম্বরে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি তাদের সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।
তিনি বলেন, ’৭৫-এর ৭ নভেম্বর সৈনিক-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবে সঠিক জাতিসত্তার সন্ধান মেলে। সুরক্ষা হয় স্বজাতির স্বাধীনতা এবং স্বেচ্ছাচারিতার অর্গলমুক্ত হয় গণতন্ত্র। ১৯৭৫ সালের এ দিনে আধিপত্যবাদী শক্তির নীলনকশা প্রতিহত করে এদেশের বীর সৈনিক ও জনতা। সম্মিলিত প্রয়াসে জনগণ নতুন প্রত্যয়ে জেগে ওঠে। ৭ নভেম্বর বিপ্লবের সফলতার সিঁড়ি বেয়েই আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক মুক্তির পথ পেয়েছি। ৭ নভেম্বর বিপ্লবের মহানায়ক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আমাদের সে পথ দেখিয়ে গেছেন। তার প্রদর্শিত পথ ধরেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন-অগ্রগতির মহাসড়কে উঠে এসেছে। আর সেজন্যই আমাদের জাতীয় জীবনে ৭ নভেম্বরের গুরুত্ব অপরিসীম।
আজকের এই মহান দিনে আমি দেশবাসী সবাইকে আহ্বান জানাই—যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৭৫ সালে আমরা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম, সেই একই চেতনা বুকে ধারণ করে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় আবার সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমিরের বাণী : যথাযোগ্য মর্যাদায় ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালনের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় জীবনে এ দিবসটির গুরুত্ব ও তাত্পর্য অপরিসীম। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশের সিপাহী-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হেফাজত করেছিল। সেদিন এদেশের সিপাহী-জনতা আধিপত্যবাদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল তা চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ৭ নভেম্বরের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশবাসী ভবিষ্যতেও এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে হেফাজত করবে ইনশাল্লাহ। ৭ নভেম্বর যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য দলের সব শাখার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
৭ নভেম্বর উপলক্ষে এছাড়া বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ ভাসানী), বাংলাদেশ ন্যাপ, জাসদ প্রভৃতি সংগঠন।
ন্যাপ মহাসচিবের বাণী : বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূইয়া বলেছেন, স্বাধীনতার ৪১ বছরেও আমরা জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারিনি। ’৭৫-এর ৭ নভেম্বর ছিল ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক সৈনিক আর জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ সংগ্রাম। সেদিনই ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তি পরাজিত হয়েছিল। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আর পতাকা-মানচিত্র রক্ষায় সেই ৭ নভেম্বরের চেতনায় ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
তিনি গতকাল সকালে দলীয় কার্যালয়ে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ন্যাপ ঢাকা মহানগর আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নগর সহ-সভাপতি মতিয়ারা চৌধুরী মিনুর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ন্যাপ যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ শাহজাহান সাজু, স্বপন কুমার সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কামাল ভূইয়া, বাংলাদেশ যুব ন্যাপ যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান, বাংলাদেশ জাতীয় ছাত্রদল যুগ্ম আহ্বায়ক সোলায়মান সোহেল, ন্যাপ নগর সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামান শামিম, সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন ভানু, সম্পাদক আমিনা খাতুন মনি, মো. কাউছার আলী, ফাতেমা আক্তার লাকি প্রমুখ।
No comments:
Post a Comment