চলে গেলেন সংগ্রামী আলেম মুফতী ফজলুল হক আমিনী। রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে মঙ্গলবার রাতে মারা যান তিনি। (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)।
আজ বুধবার বিকাল ৩টায় জাতীয় ঈদগাঁ ময়দানে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তবে তার দাফনের স্থান নির্ধারিত হয়নি।মুফতি আমিনী বিএনপি নেতৃত্বাধীন বর্তমান ১৮ দলীয় জোটের শরিক দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিলেন। রাজধানীর লালবাগ জামেয়া কোরআনিয়া এবং বড় কাটারা আশরাফুল উলুম মাদরাসাসহ বেশ কয়েকটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন তিনি।আমিনী ১৯৪৫ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদরের আমিনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দেশে এবং করাচিতে ইসলামী শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি কামরাঙ্গীরচরে মরহুম হাফেজ্জী হুজুর প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সেই বছরে হাফেজ্জী হুজুরের মেয়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন আমিনী। ১৯৭২ সালে কর্মজীবনে মাত্র ৯ মাসে পবিত্র কোরআনের হাফেজ হন তিনি।১৯৭৫ সালে তিনি জামেয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদরাসার শিক্ষক ও সহকারী মুফতি হিসেবে যোগ দেন। পরে একই প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রিন্সিপাল ও প্রধান মুফতির দায়িত্ব পান। ১৯৮৭ সাল থেকে তিনি ওই মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদিসের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।মাওলানা আমিনী ১৯৮১ সালে খেলাফত আন্দোলনে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতি ও ইসলামী আন্দোলন শুরু করেন। পরে ওই দলের সেক্রেটারি জেনারেল নিযুক্ত হন। পরে তিনি উলামা কমিটি বাংলাদেশ ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। একই সময় তিনি ইসলামী মোর্চারও মহাসচিব ছিলেন। একপর্যায়ে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি ও মাদরাসা হেফাজত কমিটি বাংলাদেশের আমির হিসেবে দেশে ইসলাম রক্ষার আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন।বর্তমান সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে গিয়ে মুফতি আমিনী সরকারের রোষানলে পড়েন এবং গত প্রায় ২ বছর তাকে ঢাকার লালবাগ মাদরাসা ক্যাম্পাসে একরকম বন্দি করে রাখে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একাধিকবার মিথ্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার ও হয়রানি করা হয়। ইসলামের পক্ষে সাহসী ভূমিকা রাখায় তার ছেলেকেও গুম করেছিল বর্তমান সরকারের গোয়েন্দাবাহিনী।মুফতি ফজলুল হক আমিনী অষ্টম জাতীয় সংসদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। মুফতি আমিনীর মৃত্যুতে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও ১৮ দলীয় জোট নেতা খালেদা জিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। মুফতি আমিনীর মৃত্যুতে তার দল, জোট ও অন্যান্য ইসলামী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।ইসলামী ঐক্যজোট ছাড়াও এই প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন বিভিন্ন দল ও সংগঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আল্লাহর আইন চালুর সংগ্রাম করেছেন। বাবরি মসজিদ ভাঙার বিরুদ্ধে আয়োজিত লং মার্চের অন্যতম আয়োজক ও নেতা ছিলেন তিনি। এছাড়া বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করতে অনন্য ভূমিকা পালন করেন তিনি।
No comments:
Post a Comment