Tuesday, November 13, 2012

হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধ উপায়ে বালু উত্তোলন অব্যাহত সরকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন,মাধবপুর (হবিগঞ্জ) থেকে
হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন নদী ও চা বাগান থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছেন একটি মহল। প্রতি দিন এই বালু পাচার করছে মাধবপুর পূর্বে হয়ে হরষপুর উপর দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, আখাউড়া, সরাইল, মাধবপুরসহ বিভিন্ন স্থানে। ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে এলাকার রাস্তাঘাট। উক্ত জেলায় প্রায় ছোট বড় ৩১টি বালু মহাল রয়েছে। তন্মধ্যে মাধবপুর উপজেলায় ৮টি, চুনারুঘাট উপজেলায় ১০টি, বাহুবল উপজেলায় ১১টি, সদর উপজেলায় ১টি এবং নবীগঞ্জ উপজেলায় ১টি। প্রায় ৫ শতাধিক একর এলাকাব্যাপী বালু মহালগুলোর মধ্যে ৭৬.৮৩ একর ব্যাপী করাঙ্গী নদীর বালুমহাল সবচেয়ে বড় এবং ১.১০একর ব্যাপী লাউছড়া-দেউছড়া বালু মহাল সবচেয়ে ছোট। এ সকল বালু মহাল ইজারা দিয়ে রাজস্ববাবদ যে অর্থ আদায় হয় তা পরিকল্পিতভাবে দেয়া গেলে কয়েকগুন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
হবিগঞ্জের বিভিন্ন নদী ও চা বাগান থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হওয়া ছাড়াও পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। খোয়াই, করাঙ্গী, সোনাই, কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছে। নদী থেকে বালু উত্তোলনের জন্য অনেক স্থানে নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ কেটে ট্রাক্টর চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ সকল ট্রাক্টর দিবা-রাত্রি বালু বোঝাই করে বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে বিভিন্ন স্থানে জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে। বিশেষ করে চা বাগানগুলোর ছড়া থেকে মুল্যবান সিলিকা স্যান্ড উত্তোলন করে তা দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করা হচ্ছে। বালু তোলার জন্য অনেক ক্ষেত্রে এক্সকেভেটর ব্যবহার করা হচ্ছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে ক্ষমতাসীন দলের অনেক সদস্যরাও জড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইদানিং বালু উত্তোন নিয়ে কয়েকটি মহালে সংঘর্ষের স্বার্থন্বেষী মহালের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।
একটি সূত্রে জানা যায়, আদালতে মামলা এবং অন্যান্য জটিলতার কারণে কয়েকটি বালু মহাল ইজারা দিতে না পারায় প্রচুর পরিমাণ টাকা সরকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। জেলায় চা বাগানের সংখ্যা ২৪টি। তন্মধ্যে কিছু সংখ্যাক চা বাগানের পাহাড়িয়া খাল যা “ছড়া” হিসাবে পরিচিত। এই ছড়াগুলোতে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ সিলিকা স্যান্ড পাওয়া যায়। এই সিলিকা স্যান্ড গ্লাস ফ্যাক্টরীগুলোর কাচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সাম্প্রতিক কালে বালু ব্যবসায়ীদের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে ঐ সকল চা বাগানে। তারা প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় ঐসকল চাবাগানের ছড়া থেকে প্রতিদিনই ট্রাক্টার/ট্রাকযোগে বিপুল পরিমাণ সিলিকা স্যান্ড উত্তোলন করে তা দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করছে। চা বাগানগুলোর বালু মহাল থেকে সাধারণত দেড়ফুট গভীরতা পর্যন্ত বালু তোলার নিয়ম থাকলেও নিয়ম ভঙ্গ করে ৬/৭ ফুট গভীর করে বালু তোলায় চাবাগানের প্ল্যান্টেশন ভেঙ্গে যাচ্ছে। এতে চাবাগানগুলোর বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হওয়া ছাড়াও পরিবেশগত ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে।
ইতিমধ্যে সুরমা, তেলিয়াপাড়া, চন্ডিছড়া, জগদীশপুর ইত্যাদি চা বাগানের প্ল্যান্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর জাতীয় পরিষদ সদস্য তোফাজ্জল সোহেল জেলার বিভিন্ন স্থানের বালু মহাল থেকে নিয়ম বর্হিভুতভাবে বালু উত্তোলন করায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

No comments:

Post a Comment