নিউজ ডেক্স
আমাদের আজমিরীগঞ্জ২৪ ডটকম
আমাদের আজমিরীগঞ্জ২৪ ডটকম
হবিগঞ্জ :-
হবিগঞ্জে পুলিশী বাধা উপেক্ষা করে শহরে ইসলামী ছাত্র শিবির মিছিল করেছে। মিছিল শেষ হলে শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ২ শিবির কর্মীকে গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের আশরাফ জাহান কমপ্লেক্স এলাকা থেকে ছাত্র শিবিরের একটি বিােভ মিছিল শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদনি করে। মিছিল শেষ হওয়ার পর থেকে পুলিশ শিবির নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। এ পর্যন্ত কামাল হোসেন ও মনির হোসেন নামের ২ শিবির কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ইসলামী ছাত্র শিবিরের জেলা সভাপতি খলিলুর রহমান, সেক্রেটারী আতিকুর রহমান সোহাগের নেতৃত্বে বিােভ মিছিলে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ গ্রহণ করেন। সারা দেশে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের উপর পুলিশী নির্যাতন, গ্রেফতার, কেন্দ্রীয় নেতাদের মাসের পর মাস বিনা বিচারে জেলে আটকে রাখাসহ সরকারের দমন পীড়নের প্রতিবাদে গতকাল হবিগঞ্জ শহরে বিােভ মিছিল বের করে ছাত্র শিবির। জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মুখলিছুর রহমান সেক্রেটারী মাওলানা মুশাহিদ আলী হবিগঞ্জে গ্রেফতারকৃত নিরপরাধ শিবির কর্মীদের দ্রুত মুক্তি দেয়ার দাবী জানান।
বেপরোয়া হয়ে উঠেছে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। গতকালও তারা বিক্ষোভের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। গাড়ি ভাঙচুর করেছে। দোকানপাটেও হামলা চালিয়েছে তারা। রংপুর, রাজশাহী ও সিলেট গতকাল রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। রাজশাহীতে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে পুলিশকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। রংপুরেও পুলিশকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ হয়েছে আরও বেশ কয়েকটি জেলায়। এতে সারাদেশে অর্ধশত পুলিশসহ দু’শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। রংপুর ও বগুড়ায় বিক্ষুব্ধ জনতা জামায়াত কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে। পুলিশ জেলায় জেলায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবিরের ৩০৯ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। এর আগের দিন গত সোমবারও জামায়াত-শিবির যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক নেতাদের মুক্তিসহ অন্যান্য দাবিতে রাজধানী ঢাকার মতিঝিলে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। সে সঙ্গে তারা সংঘর্ষে লিপ্ত হয় বিভিন্ন জেলায়। সহিংস ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। রাজধানী ঢাকায় গতকালও জামায়াত পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। রংপুর, রাজশাহী, সিলেট ছাড়াও চট্টগ্রাম, বরিশাল, সাতক্ষীরা, নোয়াখালী ও অন্যান্য জেলায় জামায়াত-শিবির বিক্ষোভ প্রদর্শনের নামে মারমুখী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সতর্কতার সঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা ছিল। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হঠাত্ মালিবাগ রেলগেট এলাকায় শতাধিক জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিচার্জ করে জামায়াত নেতাকর্মীদের হঠিয়ে দেয়। এখান থেকে পুলিশ দুই জামায়াত কর্মীকে গ্রেফতার করে। সংঘর্ষের সময় মালিবাগ-রামপুরা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশের রমনা জোনের উপকমিশনার সৈয়দ নূরুল ইসলাম জানান, জামায়াত নেতাকর্মীরা রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ করতে চাইলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। জামায়াত কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়। রংপুর, রাজশাহী, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যুরো, অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
রংপুর : সকালে রংপুরে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রংপুর শাপলা চত্বর এলাকা। জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশ ও স্থানীয় জনগণের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। জনতা জামায়াতের কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিক, পথচারীসহ শতাধিক আহত হয়। কোতোয়ালি থানার ওসি আলতাফ হোসেন ঘটনাস্থলে যাওয়ার সময় শিবিরের কর্মীরা চামড়াপট্টিতে তার গাড়ি আটক করে ভাঙচুর ও তাকে মারধর করে। তাকে উদ্ধারে এগিয়ে এলে ১০ পুলিশ, সাংবাদিক, পথচারীসহ শতাধিক আহত হয়। পরে সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইসলামী ছাত্রশিবির শাপলা চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। এক পর্যায়ে শাপলা চত্বরের পূর্বে একদল শিবিরকর্মী পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশও পাল্টা টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশ চারপাশ থেকে ঘিরে লাঠিচার্জ শুরু করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। শাপলা চত্বর থেকে চারপাশে পৌনে এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় দু’ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে পুলিশের ফাঁকা গুলি, কাঁদানে গ্যাস ও লুটেরাদের বেপরোয়া তাণ্ডবে মুহূর্তের মধ্যেই এলাকার দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
রাজশাহী : গতকাল বিকেলে রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন স্থানে একযোগে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা অতর্কিতভাবে রাস্তায় নেমে ভাঙচুর শুরু করে। পুলিশের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় ৫ পুলিশসহ আহত হয় অন্তত ৩০ জন। এ সময় নগরীর জিরো পয়েন্ট এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বৃষ্টির মধ্যেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষের ভিড়ে শিবিরকর্মীরা অবস্থান নেয়। লোকনাথ স্কুলের কাছে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে তারা। একই সময় জিরো পয়েন্ট, বাটার মোড় ও হেতেমখাঁ এলাকায় হঠাত্ করেই তারা রাস্তায় নেমে পড়ে। সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে শিবিরকর্মীরা ফুটপাতের কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করে। এ সময় পাশে থাকা কয়েকজন পুলিশকে তারা ধাওয়া করে তাড়িয়ে দেয়। জিরো পয়েন্টে শিবিরকর্মীরা এক পুলিশ কনস্টেবলের রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে ওই রাইফেল দিয়েই তাকে বেধড়ক মারধর করে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ গেলে শিবিরকর্মীরা তাদের লক্ষ করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, পুলিশকে লক্ষ শিবিরকর্মীরা বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় শিবিরের ১৫ কর্মীকে আটক করে পুলিশ। এর আগে সকাল থেকেই নগরী জুড়ে কঠোর নিরাপত্তা নিয়েছিল পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যদেরও মাঠে নামানো হয়। পুলিশ মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের ৩৫ নেতাকর্মীকে আটক করে।
সিলেট : জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে গতকাল দুপুরে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সিলেট নগরী। দুপুর আড়াইটার দিকে নগরীর কোর্ট পয়েন্ট, জিন্দাবাজার, বারুতখানা, জেল রোড ও জল্লারপাড়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে ১২ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৪০ জন আহত হন। এ সময় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা পুলিশের পিকআপ ভ্যানসহ বেশ কয়েকটি যানবাহন ও দোকানপাটে ভাঙচুর চালায়। পুলিশ অর্ধশতাধিক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে। আহতদের মধ্যে সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার নরেশ চাকমাসহ ১২ পুলিশ সদস্য রয়েছেন। পুলিশ ২১ জনকে আটক করেছে।
চট্টগ্রাম : বেলা পৌনে ১টার দিকে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় শিবির নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে আকস্মিক মিছিল বের করে। এ সময় তারা বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে এবং যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ ঘটনায় শিবিরের ১১ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।
বগুড়া : বেলা সাড়ে ১১টায় জামায়াত নেতাকর্মীরা শহরের টিটু মিলনায়তন মোড়ে একটি মিছিল বের করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় উভয় পক্ষে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ ১১ জনকে গ্রেফতার করে। দুপুর ১২টার দিকে লোকজন শহর জামায়াতের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে।
গাইবান্ধা : সকালে জামায়াত-শিবিরের একটি মিছিল পলাশপাড়া মোড়ে পৌঁছলে পুলিশ ধাওয়া করে। মিছিলকারীরা এ সময় পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ও বাটুলের গুলতি ছুড়ে মারে। পরে তারা পলাশপাড়ায় কয়েকটি বাড়িতে ঢিল ছুড়তে থাকলে এলাকার লোকজন ও পুলিশ সংঘবদ্ধ হয়ে মিছিলকারীদের ধাওয়া করে। পুলিশ শিবিরের ১২ কর্মীকে আটক করেছে। সংঘর্ষে এসআই রায়হান, কনস্টেবল ভবেশ ও আলমসহ অন্তত ২০ জন আহত হন।
সাতক্ষীরা : বিকেলে শহরে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা লাঠি ও ইট নিয়ে হঠাত্ বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। পুলিশকে লক্ষ করে শিবির ক্যাডাররা ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশও রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে।
নোয়াখালী : বিকেলে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা মিছিল বের করে পৌর বাজার প্রাঙ্গণে গেলে পুলিশ মিছিলের ওপর লাঠিচার্জ করে। এ সময় উভয় পক্ষের সংঘর্ষে সদর থানার ওসিসহ সাত পুলিশ সদস্য ও ১০-১২ জন পথচারী আহত হন। পুলিশ ৩১ জনকে আটক করে।
অন্যান্য জেলা : গতকাল রাজবাড়ীতে নয় ও ঝালকাঠিতে ছয় নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। হবিগঞ্জে দুপুরে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে চার নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। বরগুনায় দুই ও কুষ্টিয়ায় নয়, ঠাকুরগাঁওয়ে তিন, সিরাজগঞ্জে তিন, নওগাঁয় নয়, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মেহেরপুরে পুলিশ দু’জনকে আটক করে। মাদারীপুরে বিকেলে শহরের পুরান বাজার মেলবোর্ন প্লাজার সামনে থেকে সমাবেশ করার প্রস্তুতির সময় দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। পিরোজপুরে ছাত্রশিবির একটি মিছিল বের করলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দেয় এবং পাঁচ কর্মীকে পুলিশ আটক করে। নারায়ণগঞ্জে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। পুলিশ ফতুল্লা থেকে স্কুলশিক্ষক এক জামায়াত নেতাকে গ্রেফতার করেছে। জামালপুরে ছয় ও নাটোরে নয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বরিশালে গতকাল দুপুরে ছাত্রশিবির শহরে একটি মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দিয়ে তা পণ্ড করে দেয়। এ সময় শিবির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থল থেকে তিন শিবিরকর্মীকে আটক করে। পাবনায় ২২ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৯ জামায়াত-শিবিরকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসব জেলায় জামায়াত-শিবির মিছিল করে।
রংপুর : সকালে রংপুরে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রংপুর শাপলা চত্বর এলাকা। জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশ ও স্থানীয় জনগণের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। জনতা জামায়াতের কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিক, পথচারীসহ শতাধিক আহত হয়। কোতোয়ালি থানার ওসি আলতাফ হোসেন ঘটনাস্থলে যাওয়ার সময় শিবিরের কর্মীরা চামড়াপট্টিতে তার গাড়ি আটক করে ভাঙচুর ও তাকে মারধর করে। তাকে উদ্ধারে এগিয়ে এলে ১০ পুলিশ, সাংবাদিক, পথচারীসহ শতাধিক আহত হয়। পরে সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইসলামী ছাত্রশিবির শাপলা চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। এক পর্যায়ে শাপলা চত্বরের পূর্বে একদল শিবিরকর্মী পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশও পাল্টা টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশ চারপাশ থেকে ঘিরে লাঠিচার্জ শুরু করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। শাপলা চত্বর থেকে চারপাশে পৌনে এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় দু’ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে পুলিশের ফাঁকা গুলি, কাঁদানে গ্যাস ও লুটেরাদের বেপরোয়া তাণ্ডবে মুহূর্তের মধ্যেই এলাকার দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
রাজশাহী : গতকাল বিকেলে রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন স্থানে একযোগে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা অতর্কিতভাবে রাস্তায় নেমে ভাঙচুর শুরু করে। পুলিশের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় ৫ পুলিশসহ আহত হয় অন্তত ৩০ জন। এ সময় নগরীর জিরো পয়েন্ট এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বৃষ্টির মধ্যেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষের ভিড়ে শিবিরকর্মীরা অবস্থান নেয়। লোকনাথ স্কুলের কাছে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে তারা। একই সময় জিরো পয়েন্ট, বাটার মোড় ও হেতেমখাঁ এলাকায় হঠাত্ করেই তারা রাস্তায় নেমে পড়ে। সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে শিবিরকর্মীরা ফুটপাতের কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করে। এ সময় পাশে থাকা কয়েকজন পুলিশকে তারা ধাওয়া করে তাড়িয়ে দেয়। জিরো পয়েন্টে শিবিরকর্মীরা এক পুলিশ কনস্টেবলের রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে ওই রাইফেল দিয়েই তাকে বেধড়ক মারধর করে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ গেলে শিবিরকর্মীরা তাদের লক্ষ করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, পুলিশকে লক্ষ শিবিরকর্মীরা বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় শিবিরের ১৫ কর্মীকে আটক করে পুলিশ। এর আগে সকাল থেকেই নগরী জুড়ে কঠোর নিরাপত্তা নিয়েছিল পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যদেরও মাঠে নামানো হয়। পুলিশ মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের ৩৫ নেতাকর্মীকে আটক করে।
সিলেট : জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে গতকাল দুপুরে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সিলেট নগরী। দুপুর আড়াইটার দিকে নগরীর কোর্ট পয়েন্ট, জিন্দাবাজার, বারুতখানা, জেল রোড ও জল্লারপাড়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে ১২ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৪০ জন আহত হন। এ সময় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা পুলিশের পিকআপ ভ্যানসহ বেশ কয়েকটি যানবাহন ও দোকানপাটে ভাঙচুর চালায়। পুলিশ অর্ধশতাধিক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে। আহতদের মধ্যে সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার নরেশ চাকমাসহ ১২ পুলিশ সদস্য রয়েছেন। পুলিশ ২১ জনকে আটক করেছে।
চট্টগ্রাম : বেলা পৌনে ১টার দিকে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় শিবির নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে আকস্মিক মিছিল বের করে। এ সময় তারা বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে এবং যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ ঘটনায় শিবিরের ১১ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।
বগুড়া : বেলা সাড়ে ১১টায় জামায়াত নেতাকর্মীরা শহরের টিটু মিলনায়তন মোড়ে একটি মিছিল বের করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় উভয় পক্ষে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ ১১ জনকে গ্রেফতার করে। দুপুর ১২টার দিকে লোকজন শহর জামায়াতের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে।
গাইবান্ধা : সকালে জামায়াত-শিবিরের একটি মিছিল পলাশপাড়া মোড়ে পৌঁছলে পুলিশ ধাওয়া করে। মিছিলকারীরা এ সময় পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ও বাটুলের গুলতি ছুড়ে মারে। পরে তারা পলাশপাড়ায় কয়েকটি বাড়িতে ঢিল ছুড়তে থাকলে এলাকার লোকজন ও পুলিশ সংঘবদ্ধ হয়ে মিছিলকারীদের ধাওয়া করে। পুলিশ শিবিরের ১২ কর্মীকে আটক করেছে। সংঘর্ষে এসআই রায়হান, কনস্টেবল ভবেশ ও আলমসহ অন্তত ২০ জন আহত হন।
সাতক্ষীরা : বিকেলে শহরে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা লাঠি ও ইট নিয়ে হঠাত্ বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। পুলিশকে লক্ষ করে শিবির ক্যাডাররা ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশও রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে।
নোয়াখালী : বিকেলে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা মিছিল বের করে পৌর বাজার প্রাঙ্গণে গেলে পুলিশ মিছিলের ওপর লাঠিচার্জ করে। এ সময় উভয় পক্ষের সংঘর্ষে সদর থানার ওসিসহ সাত পুলিশ সদস্য ও ১০-১২ জন পথচারী আহত হন। পুলিশ ৩১ জনকে আটক করে।
অন্যান্য জেলা : গতকাল রাজবাড়ীতে নয় ও ঝালকাঠিতে ছয় নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। হবিগঞ্জে দুপুরে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে চার নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। বরগুনায় দুই ও কুষ্টিয়ায় নয়, ঠাকুরগাঁওয়ে তিন, সিরাজগঞ্জে তিন, নওগাঁয় নয়, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মেহেরপুরে পুলিশ দু’জনকে আটক করে। মাদারীপুরে বিকেলে শহরের পুরান বাজার মেলবোর্ন প্লাজার সামনে থেকে সমাবেশ করার প্রস্তুতির সময় দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। পিরোজপুরে ছাত্রশিবির একটি মিছিল বের করলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দেয় এবং পাঁচ কর্মীকে পুলিশ আটক করে। নারায়ণগঞ্জে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। পুলিশ ফতুল্লা থেকে স্কুলশিক্ষক এক জামায়াত নেতাকে গ্রেফতার করেছে। জামালপুরে ছয় ও নাটোরে নয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বরিশালে গতকাল দুপুরে ছাত্রশিবির শহরে একটি মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দিয়ে তা পণ্ড করে দেয়। এ সময় শিবির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থল থেকে তিন শিবিরকর্মীকে আটক করে। পাবনায় ২২ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৯ জামায়াত-শিবিরকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসব জেলায় জামায়াত-শিবির মিছিল করে।
No comments:
Post a Comment